শীতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন? শীতের মৌসুমে ত্বকের যত্ন নেয়ার উপায়!

শীতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন? শীতের মৌসুমে ত্বকের যত্ন নেয়ার উপায়!

 

শীত মানেই রুক্ষতা এবং শুষ্কতার সময়। প্রকৃতি কুয়াশার চাদর গায়ে শীতল বাতাসে জানান দেয় তার অবস্থান। নিজেকে বাইরের ঠান্ডা বাতাস আর শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করার জন্য চলে নানা রকম প্রস্তুতি। ঠিক তেমনি ত্বকের সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। আমাদের সারা বছরই ত্বকের যত্ন নিতে হয়। ত্বক আমাদের শরীরের একটি মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু শীত আসার সাথে সাথেই আমাদের ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হতে শুরু করে। তাই শীতের সময় ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। শীত যত বাড়তে থাকে ত্বকের সমস্যা তত বেশি হতে থাকে। ত্বক সুন্দর, কোমল এবং মসৃণ রাখার জন্য ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন।

শীতকালে ত্বকের যত্ন

শীতকালে আবহাওয়ার শুষ্কতার জন্য আমাদের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়ে যায়। তাই আমাদের শীতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে বা অবহেলার কারণে আমরা আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে অবহেলা করে থাকি। ঠিক মতো ত্বকের যত্ন না নেওয়ার কারণে আমাদের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়। ত্বকের উজ্জ্লতা হারায়। ত্বকের উপরিভাগ কালো হয়ে যায়। তাই শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১। ত্বককে দিন পানিযুক্ত খাবার

শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা অনেকটাই বেড়ে যায় খাদ্য অভ্যাসের কারণে। তাই ত্বকের আদ্রর্তা বজায় রাখতে পানিযুক্ত খাবার খাওয়া অনেক বেশী জরুরী। শীতকালে প্রচুর সবজি পাওয়া যায়। পানি সমৃদ্ধ সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, গাজর, লাউ এবং শসা প্রভূতি। এগুলো দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখে এবং ত্বক শুষ্ক হওয়ার হাত বাঁচায়।

২। শীতে পরিমিত পানি খাওয়া

ত্বক আর্দ্র এবং কোমল রাখতে চাইলে ক্রিমের পাশাপাশি সঠিক পরিমাণে পানিও পান করতে হবে। পানি মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরকে ভিতর থেকে আর্দ্র রেখে ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বিরত রাখে। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ্য ব্যক্তির জন্য দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস অথবা ২ লিটার পানি পান করা উচিত। পরিমাণ মতো পানি পান না করলে শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক পানিশূণ্য হয়ে পড়ে। এতে করে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ্ম এবং নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তাই শীতেও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

৩। লোশন

শীতের তীব্রতা সবার আগে চোখে পড়ে ত্বকে। তাই ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে চাই লোশন। লোশন ব্যবহার করার ফলে ত্বকের ময়েশ্চারাইজারকে অনেকক্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম। লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জলতা এবং ত্বককে কোমল রাখতে সাহায্য করে। লোশন ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আপনার ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিন। এতে করে বাইরে থাকা ধুলাবালি আপনার ত্বকে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে আপনার ত্বকের কোনোরূপ ক্ষতি করতে পারবে না। তাই শীতে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে লোশন ব্যবহার করবেন।

৪। অলিভ অয়েল

শীতে আপনার ত্বক যখন রুক্ষ এবং শুষ্ক তখন তাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েলের উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে ত্বকের ক্ষেত্রে। যারা ত্বকে খুব হালকা কিছু ব্যবহার করতে চান তারা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বক কোমল হয়ে উঠবে।

৫। গ্লিসারিন

শীতে ত্বকের সুরক্ষার আরেকটি নাম গ্লিসারিন। অনেকেই গ্লিসারিন ব্যবহার করতে চান না। কারণ এটি ব্যবহার করার পর শরীরে চিপচিপে ভাবের জন্য। গ্লিসারিন ব্যবহার করার আগে তা অবশ্যই পানি মিশিয়ে নিবেন। পানি মেশানোর ফলে গ্লিসারিন অনেকটাই পাতলা হয়ে আসে। ফলে আপনি খুব সহজেই তা ব্যবহার করতে পারবেন।

৬। ত্বকের যত্নে ডাবের পানি

শীতের প্রভাবে ত্বক প্রতিনিয়ত শুষ্ক হয়ে উঠে। রুক্ষ ত্বকের যত্নে ডাবের পানির ভূমিকা অপরিসীম। শুষ্ক ত্বকে ব্রণের পরিমাণও বেশি হতে দেখা যায়। ডাবের পানির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি, কে, জিংক এবং আয়োডিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদ্যমান থাকে। প্রতিদিন রুটিনে ডাবের পানি পান করুন। এছাড়াও ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললেও উপকার পাবেন। তাই নিয়মিত ডাবের পানি ব্যবহার করুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে বেশ সাহায্য করে থাকে।

৭। ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার

ত্বক যদি খুব বেশি পরিমাণে শুষ্ক হয়ে থাকে তবে তা দূর করার জন্য মধুর সাহায্য নিতে পারেন। এই কাজটি রাতে বেলায় করলে সবথেকে ভালো হয়। মধু হাতে নিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন ২০-২৫ মিনিট। পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন পানি দিয়ে সুন্দর করে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হওয়ার সাথে সাথে ত্বক উজ্জ্বল মসৃণ এবং কোমল হয়ে উঠবে। মধু বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।  

ত্বকে মধু ব্যবহার যেভাবে করবেন

কেবল এই রুক্ষতার সময়েই নয়, সারা বছর ত্বক সতেজ রাখতে চাইলে মধু ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। জেনে নিন ত্বকে মধু ব্যবহারের কিছু উপকারিতা ও কীভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে-

মধু

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বক নরম রাখে। এক চা-চামুচ মধু সরাসরি মুখে লাগান। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসবে। এছাড়া ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করতে মধু বেশ কার্যকর।

মধু ও দুধ

মধু ও দুধের মিশ্রণ মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। মধু ও দুধের প্যাক তৈরি করতে একটি বাটিতে এক টেবিল চামচ দুধের মালাই ও মধু ভালো করে মেশান। মেশানোর পর মিশ্রণটিকে ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর পাতলা কাপড় দিয়ে মুখ সুন্দর করে মুছে ফেলুন। এতে আপনার মুখের কালো দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করতে পারবেন।

পাকা পেঁপে ও মধু

পাকা পেঁপে পেস্ট করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে হালকা ভাবে ম্যাসেজ করুন। এই পেস্টটি তৈরি করার জন্য পাকা পেঁপের সাথে সামান্য মধু, লেবুর রস, অল্প অলিভ অয়েল এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে তৈরি করুন। লাগানোর ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা নিয়মিত মুখে ও গলায় ম্যাসেজ করলে ত্বকে বয়সের ছাপ দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

কাঁচা দুধ ও মধু

কাঁচা দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই প্যাকটি ত্বকে জ্বালা পোড়া বা প্রদাহ থাকলে ব্যবহার করে আরাম পাবেন। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য দুই চা-চামুচ মধু ও দুই টেবিল চামচ কাঁচা দুধের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে সারা শরীরে লাগান। শুকিয়ে গেলে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ডিম ও মধু

ডিমের কুসুম শুষ্ক ত্বক নরম-কোমল রাখতে বিশেষ সহায়তা করে থাকে। এছাড়া এই ফেইসপ্যাকটি ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই ফেইসটি তৈরি করার জন্য ডিমের কুসুম এবং এক চা-চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাকটি তৈরি করুন। ত্বকে লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে তা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনি আপনার ত্বকের বেশ উপকার পাবেন।

শেষ কথা

শীতের মৌসুমে আবহাওয়ার শুষ্কতার জন্য ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ্ম হয়ে যায়, ত্বক নিষ্প্রাণ ভাব চলে আসে। এই কারণে শীতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু ব্যস্ততার এই যুগে কার কাছে সময় আছে ত্বকের একটু বাড়তি যত্ন নেয়ার। তারপরেও শীতে একটু বাড়তি যত্ন নিতেই হবে। ঠিক মতো যত্ন না নিলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়ে যায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায়, ত্বকের উপরিভাগ কালো হয়ে আসে এবং ত্বক ফেটে যায়। তাই এই উপায়গুলো সতর্কতার সাথে ব্যবহার করলে ত্বককে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাবে। আপনার ত্বকের সুস্থ্যতার জন্য রইল শুভকামনা।

# ব্রণ কেনো হয়? দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ # স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায়

Related posts

Leave a Comment